বাশার আল-আসাদের পতনে ক্ষতিগ্রস্ত ইরান-রাশিয়া, লাভবান কারা

বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মাত্র ১২ দিনের ঝটিকা এক অভিযানে সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের ৫৪ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান ঘটেছে। বিদ্রোহীরা রাজধানী দামেস্কে ঢুকে পড়লে গত রোববার বাশার আল–আসাদ দেশ ছেড়ে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন রাশিয়ায়। এর মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের আধুনিক ইতিহাসে সবচেয়ে নৃশংস এক স্বৈরাচারী সরকারের পতন ও দেশটিতে ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধের ইতি ঘটেছে।

আরব বিশ্বের কর্তৃত্ববাদী শাসকদের বিরুদ্ধে ২০১১ সালে অন্যান্য দেশের মতো সিরিয়াতেও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ শুরু হয়। কিন্ত ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে বাশার আল–আসাদ বিক্ষোভকারীদের ওপরে চালান ভয়াবহ নৃশংসতা। এর পর থেকে পাঁচ লক্ষাধিক সিরীয় প্রাণ হারিয়েছেন। উদ্বাস্তু হয়েছেন আরও দেড় কোটি। রাশিয়া, ইরান, তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্র জড়িয়ে পড়লে সিরিয়ার এ গৃহযুদ্ধ আন্তর্জাতিক রূপ ধারণ করে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, সিরিয়ার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল পরাশক্তি দেশগুলো। ফলে বাশার আল–আসাদ সরকারের পতনের পরে মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের একটি পরিবর্তন এখন অনিবার্য হয়ে উঠেছে।

সিরিয়ার পুরোনো মিত্ররা: ১৯৪৪ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে সিরিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্ক শুরু হয়। এর এক দশক পর প্রথম আরব দেশ হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছ থেকে অস্ত্র কেনে সিরিয়া। এরপর গত শতকের সত্তরের দশকে মিসরের মতো অন্য আরব দেশগুলো সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে মুখ ফেরালেও বাশার আল–আসাদের বাবা হাফিজ আল–আসাদ সরকার সোভিয়েতের ঘনিষ্ঠ মিত্র থেকে যান।

গত শতকের নব্বইয়ের দশকের শুরুতে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটলেও দুই দেশের মধ্যকার মজবুত সম্পর্কে ভাটা পড়েনি। সিরিয়ার তারতৌসে রাশিয়ার নৌঘাঁটি রয়ে যায়। ২০০৪ সালে প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে মস্কো যান বাশার আল–আসাদ। তাঁর এ সফরের লক্ষ্য ছিল স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন সম্পর্ককে পুনরুজ্জীবিত করার পাশাপাশি সিরিয়ার সেনাবাহিনীকে আধুনিক করতে রাশিয়ার সহায়তা চাওয়া।

একইভাবে সিরিয়া ও ইরানের মধ্যকার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও কয়েক দশকের পুরোনো। ১৯৭৯ সালে দুই দেশ স্থায়ী জোট গঠন করে। সিরিয়া ও ইরানের এভাবে জোটবদ্ধ হওয়ার নেপথ্য কারণ হিসেবে কাজ করেছিল ইরাকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে উভয় দেশের বৈরী সম্পর্ক। ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে আক্রমণ চালালে দুই দেশের আরও কাছাকাছি আসার একটি উপলক্ষ তৈরি হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আগ্রাসনে ইরাকে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও ২০০৬ সালের লেবানন যুদ্ধ ইরানের জন্য শাপেবর হয়ে আসে। আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চল থেকে ভূমধ্যসাগরের তীর পর্যন্ত শিয়া–অধ্যুষিত এলাকাগুলো কথিত ‘শিয়া অঞ্চল’ হিসেবে পরিচিত। এই দুই ঘটনায় এসব এলাকায় ইরান–সমর্থিত শিয়া গোষ্ঠীগুলো ক্ষমতাধর হয়ে ওঠে। আর এ ক্ষেত্রে প্রাণকেন্দ্র হিসেবে আবির্ভাব ঘটতে থাকে সিরিয়ার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *